ক্ষমতার ভাষা ও ভাষার মৃত্যু

পার্থজিৎ চন্দ

কেতকাদাস ক্ষেমানন্ঠ¦à§‡à¦° â€˜à¦®à¦¨à¦¸à¦¾à¦®à¦™à§à¦—à ²â€™ পড়তে পড়তে মনে হয় ভাষা আসলে অনেকগুলি বিষয়ের সংহত à¦°à§‚à¦ªâ€¦à¦•à¦¿à¦¨à§à¦¤à  ভাষা সব থেকে বেশি ক্ষমতার প্রকাশ। ভাষা যেমন একজন লালন ঠিক তেমনই তার উলটো দিকে ক্ষমতার মাতৃভাষা হয়ে উঠতেও সবসময় উদগ্রীব।
à¦•à§à¦·à§‡à¦®à¦¾à¦¨à¦¨à§à ¦à§‡à¦° মনসামঙ্গল কীভাবে শুরু হচ্ছে সকলের জানা, চম্পক নগরের চাঁদ সদাগরের সঙ্গে মনসার বৈরিতা চরমে বিরাজ করছে। এ বৈরিতার উৎস যে ক্ষমতা সে নিয়ে কোনও সন্দেহ থাকতে পারে না। এক ক্ষমতা কাঠামোর সঙ্গে আরেক ক্ষমতাকাঠঠ¾à¦®à§‹à¦° সংঘর্ষ ও সেখানে থেকে উদ্ভুত ঘটনা-পরম্পঠা à¦®à¦™à§à¦—à¦²à¦•à¦¾à¦¬à§à ¯à§‡à¦° রীতি মেনে চলেছে যথাযথ ভাবে। এ ক্ষেত্রে চাঁদ সদাগর যে মনসার অন্বেষণে ঘরে ঘরে ঘুরবে সেটিই স্বাভাবিক, কিন্তু এখানে সবিশেষ লক্ষ্য করবার বিষয় চাঁদের ভাষ্য। একবার দেখে নেওয়া যাক চাঁদের মাতৃভাষা কীভাবে ক্ষমতার মাতৃভাষা হয়ে উঠতে চাইছে ও হয়ে উঠছে,
‘হেতাল লইয়া হস্তে দিবানিশি ফেরে।
মনসার অন্বেষণ করে ঘরে ঘরে।।
বলে একবার যদি দেখা পাই তার।
মারিব মাথায় বাড়ি না বাঁচিবে আর।।
আপদ ঘুচিবে মম পাব অব্যাহতি।
পরম কৌতুকে হবে রাজ্যেতে বসতি।।
-চাঁদ সদাগরের প্রতি আমাদের নীরব সমর্থণের কারণে অনেক সময়ে মনসার ক্ষমতা ও কূট-কৌশলের বিপ্রতীপে চাঁদের ক্ষমতার ভাষা নজর এড়িয়ে যায়। চাঁদের ভাষাও এক ক্ষমতারই ভাষা এবং সেটির প্রয়োগ হয়ে থাকে এভাবেই। পালটা-ক্ষমঠ¤à¦¾à¦° কেন্দ্র আসলে ক্ষমতাকেই প্রকাশ করে।
এর কিছুটা পরেই মনসার একটি বক্তব্যের দিকে নজর দেওয়া যাক,
‘মম সনে বাদ করে চাঁদ অধিকারী।।
নিরন্তর বলে মোরে কানী চেঙমুড়ী।
বিপাকে উহারে আজি ভরা ডুবি করি।’’
-মনসার এই ভাষা অতি-প্রকট ক্ষমতার ভাষা।
-কিন্তু এখানে যেটি উল্লেখ করবার, ক্ষমতার ভাষার কোনও নারী-পুরুষ হয় না। সে হয়ে ওঠে লিঙ্গ-à¦¨à¦¿à¦°à¦ªà ‡à¦•à§à¦·à¥¤
মানুষের প্রতিরক্ষঠব্যবস্থার সব থেকে বেশি ও জটিল জায়গাটি দখল করে রয়েছে ভাষা, তার মাতৃভাষা।
যে চাঁদ সদাগর কিছুক্ষণ আগেই মনসা-অন্বষঠ£à§‡ ব্যস্ত সেই কিছুটা পরে পরিস্থিতি-ঠনিত কারণে ও আত্মরক্ষাঠ° কৌশলে বলে ওঠে,
‘চাঁদবেনে বলে মিতা কি কব দুঃখের কথা
বিধি বাম লিখিল কপালে
কানী চেঙমুড়ী বেটী পুত্র মোর খাইল দুটি
সাত ডিঙা ডুবাইল জলে’।।
-এখানে দাঁড়িয়ে মনে হয় মানুষের ভাষার থেকে বেশি নমনীয় আর স্থিতিস্থা পক আর কিছুই নেই। ক্ষমতা যখন নিজের দুর্বলতা আবিষ্কার করে তখন সে নিজেকে পালটে নেবার চেষ্টা করে দ্রুত, সব থেকে প্রথম সেটি প্রতিফলিত হয় তার ভাষায়।
কিন্তু à¦®à¦™à§à¦—à¦²à¦•à¦¾à¦¬à§à ¯à§‡ ভাষা ব্যবহার ও ক্ষমতার কাঠামোর বিন্যাস অনুসরণ করা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। একবার বরং কাব্যের শেষদিকে নজর দেওয়া যাক, এতক্ষণে চাঁদ বেনের দর্প চূর্ণ হয়েছে। সে মনসার আরাধনায় রত। তার থেকেও বড় কথা মনসার স্তুতি’তে সে বলছে,
‘গলায় বসন দিয়া চাঁদবেনে দাণ্ডাইয়া
মনসারে কহে স্তুতি বাণী।
দেবের দেবতা শিব নিস্তাঠ° কারণ জীব
তব স্তুতি কি বলিতে জানি।।’
-এতক্ষণে একটি বৃত্ত সম্পূর্ণ হল, যে ভাষা-প্রয়োঠ—ে এক সময়ে চাঁদবেনে ও মনসার মধ্যে শত্রুতা ঘোষিত হয়েছিল সে ভাষা-প্রয়োঠ— থেকে এই ভাষা-প্রয়োঠ— এক আলোকবর্ষ দূরের একটি বাস্তবতা।
নিঃশব্দে বুলডোজার চালিয়ে দেবার মতো ক্ষমতা ভাষার আছে। এই শক্তি কাজ করে অ্যটমিক পাওয়ারের চেইন à¦°à¦¿à¦…à§à¦¯à¦•à¦¶à¦¨à§‡à ° রীতি মেনে। অর্থাৎ প্রথম স্তরের ক্রিয়াটিকৠ‡ দেখে যা নিতান্তই সামান্য বলে মনে হয়, একদিন সেই ঘাতক মাশরুম-মেঘৠ‡à¦° মতো ঘুরে বেড়ায় নরকের কাছাকাছি।
ভাষার এই ক্ষমতা আছে বলেই ভাষার সঙ্গে বারবার ধর্ম ও রাষ্ট্রশকৠতির গাঁটছড়া বাঁধা হয়েছে। নির্বাচিত মানুষের সঙ্গে সঙ্গে জুড়ে গেছে ‘নির্বাচিঠ’ ভাষার ধারণা।
যে সময়ের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি তা এক অদৃশ্য দানবের সময়। এই দানবের পেটের ভিতর খেলা করে যাচ্ছে ধর্ম-মিডিয়ঠ-পুঁজি-à¦¬à¦¾à¦œà¦¾à °à¥¤ প্রতিদিন যে ছোট ছোট ভাষার মৃত্যু হবে সে যেন কিছুটা নির্ধারিত-ঠ। কারণ প্রতিদিন এক ‘মেগা-সংস্ ¦•à§ƒà¦¤à¦¿â€™à¦° দানব গলা টিপে হত্যা করছে ছোট ছোট জনগোষ্ঠীর à¦®à§Œà¦²à¦¿à¦•à¦¤à¦¾à¦•à§‡à ¤ পৃথিবীর সমস্ত পাঁচতারা হোটেলের অন্দরমহলে যেমন বৈচিত্র্য নেই ঠিক তেমনই এই সংস্কৃতি ক্রমাগত ‘একক’ হয়ে উঠতে চায়। পুঁজি ও রাষ্ট্রের উপস্থিতি ক্রমশ যক্ষপুরীর রাজার মতো হয়ে উঠছে। সে ক্রিয়াশীল, অথচ অদৃশ্য। এর থেকে ভয়াবহ সময় পৃথিবীর সামনে আর আসেনি সম্ভবত।
ভাষা-মৃত্যৠà¦° দিকে তাকিয়ে অদৃশ্য দানবের সামনে বা পেটের ভিতর দাঁড়িয়ে ফ্রানজ কাফকার একটি গল্পের কথা মনে পড়ে, ‘দ্য গ্রেট ওয়াল অফ চায়না’। চিনের মহাপ্রাচীঠতৈরি হচ্ছে, অথচ কোন সম্রাট সে প্রাচীর তৈরি করছেন সে সম্পর্কে দেশের আম-জনতা অন্ধকারে। দুর্ধর্ষ দস্যুর আক্রমণ সম্পর্কে নানা মিথ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে অথচ সে দস্যুর আক্রমণ হয়তো অলীক সম্ভাবনার নামান্তর। শুধু তাই নয়, প্রাচীর শুরু হবার পঞ্চাশ বছর আগে থেকে চিনের বিদ্যালয়গৠলিতে পঠিত বিষয়ের সঙ্গে স্থাপত্যশি ল্পের সংযোগ বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এই ধারণা – স্থাপত্যশি ল্পের ছোঁয়া ছাড়া সব অধীত জ্ঞানের মূল্য সামান্য।
ক্ষমতার ‘দূরদৃষ্টঠ¿â€™ আপনার-আমার থেকে কম নয়, বরং বহু ক্ষেত্রেই তা অনেক বেশি। ফলে এই যে বিজ্ঞাপনেঠভাষায় আপনি নিজের ভাষাকে আর আবিষ্কার করতে পারছেন না, এই যে আপনার-আমার বাড়ির বাচ্চারা ভীষণ ‘স্মার্ট’ হয়ে এক বিচিত্র ভাষায় কথা বলছে (যে ভাষায় কথা বলাকে স্মার্টনেঠবলে চিহ্নিত করা হয়েছে কয়েক দশক আগে থেকেই), এই যে আপনার আমার যথেষ্ট পরিভাষা নেই এবং তার জন্য আমাদের উদ্বেগ’ও নেই তেমন – হতে পারে এ সবই কয়েক দশক আগে থেকে ছড়িয়ে দেওয়া এক মারণ-ভাইরাঠ¸à¥¤
আমরা বুঝতেই পারিনি কখন আমাদের ভাষা একটু একটু করে ‘মৃত’ হয়ে গেছে।
কারণ ফ্রানজ কাফকা সেই গল্পে দেখিয়ে ছিলেন কেন চিনের প্রাচীর টুকরো টুকরো করে গাঁথা হয়েছিল।
এ সময়ের ক্ষমতা, ভয় নেই, এক কোপে ধড় থেকে মুণ্ড নামিয়ে দেবে না। সেও একটু একটু করে টুকরো টুকরো করে কাটবে। যাতে আপনি ‘ভাষা-হারা⠙ না হয়ে যান।